মনু স্মৃতি সম্পর্কে সামান্য কিছু কথা

হিন্দু ধর্ম গ্ৰন্থ মনু স্মৃতি খুবই একটি বিবাদিত শাস্ত্র। যদিও এই বিবাদের উৎসঃ খুব প্রাচীন নয়। আধুনিক সমাজ সংস্কারক তাদের হাত ধরেই এই গ্ৰনথে কে কেন্দ্র করে যত বিবাদ জন্ম বলা যায় প্রধানতঃ তার সুত্রপাত ডঃ বি. আর আম্বেদকর ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৭, এই হিন্দু ধর্ম গ্ৰন্থ জ্বালিয়েছিলেন সকলের সামনে। তারপর থেকে বহু‌ লোকেই সেইদিন মনু স্মৃতির জ্বালায়, প্রধানত আম্বেদকরবাদী ও বামপন্থী। কিছু বছর আগে রাজস্থান হাই কোর্টের সামনে মহর্ষি মনুর মূর্তি কিছু দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছিল। সুতরাং মনু ও মনু স্মৃতির প্রতি ঘৃণা অতি স্পষ্ট।

এবার মুল প্রশ্ন মনু স্মৃতিতে কি এমন আছে? যার জন্য এতো ঘৃণা ও বিবাদ সেটিকে ঘিরে? সংক্ষেপে বললে মনু স্মৃতির যত সমালোচনা তার কেন্দ্র দুটি বিষয়কে ঘিরে নারীবিদ্বেষ ও বর্ণ ব্যবস্থা(caste system) যা হিন্দু সমাজের কাঠামো বলা যায়, তাতে শূদ্র ও অনান্য তথাকথিত নিম্ন জাতি তাদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক শ্লোক। যারা এই মনু নিয়ে বিবাদ গুলো করে তাদের আপনি জিজ্ঞেস করুন কি আছে মনু স্মৃতিতে কতবার তারা বই টা পড়েছে ? তারা কোনোদিনও খুলেও দেখেনি সম্ভবত অধিকাংশ লোকে, তোতা পড়ানোর মতো যা ওদের বাবারা শিখিয়েছে সেটাই আওড়াতে থাকবে, কয়েকটি বিবাদিত শ্লোক আপনাদের সামনে তুলে ধরবে, ব্যস!! তাও সেখানেও প্রচুর ভুল যেমন :-

//মনু তে লেখা শূদ্র যদি বেদ মন্ত্র শোনে বা পাঠ করে তার জিভ কেঁটে নাও, কানে গরম শীশা ঢেলে দাও//

প্রথম ভুল এই শ্লোক মনুতে নেই, কিন্তু মনুর বলে অনেকেই চালায়। হ্যাঁ মানছি এটা মনু তে না থাকলেও অন্য কিছু ধর্ম শাস্ত্রে এই কথা লেখা আছে। কিন্তু মজার বিষয় টা হলো মনু স্মৃতি তে আবার এটা লেখা ব্রাহ্মণ যদি মদ খায় তাকে ফুটন্ত মদ তার গায়ে ঢেলে পুড়িয়ে মারার কথা। আরো আছে যেমন চুরির অপরাধে শূদ্র যা না সাজা পাবে তার অনেক গুন সাজা ব্রাহ্মণ পাবে। সুতরাং যেই ভুলভাল যুক্তিতে যারা মনুকে শূদ্র বিরোধী আর ব্রাহ্মণ্যবাদী গ্ৰন্থ বলে সেই একই যুক্তিতে কেউ ব্রাহ্মণ বিরোধী গ্ৰন্থ বলতে পারে।  

এবার আসি উওর এ বৈদিক শাস্ত্রে দু রকম বাক্য হয় বিধি, নিষেধ আর অর্থবাদ। উপরের যেই উদাহরণ দিলাম এগুলোকে অর্থবাদ বলে। মানে সহজ ভাষায় বোঝাচ্ছি উদাহরণ দিয়ে, কেউ দোষ করলে আমরা বলি "জলে ডুবে মর" তাবলে বাস্তবে কাউকে জলে ডুবে মারা হয় না। এগুলো কথার কথা। যেমন লেখা পড়া করলে বলে "সাত খুন মাফ", বাস্তবে আপনি ভালো পড়াশোনা করলে সাত জন কে মারলে মাফ হবে ?

বাস্তবে কি মনে করেন লোকেদের খেয়ে দেয়ে কাজ ছিলো না যে কে বেদ পাঠ করছে তার জিভ কাটবে আর কে মদ খাচ্ছে তাকে পুড়িয়ে মারবে ? এই করলে আর দেশ চলতো না, আর আমাদের এই মহান সভ্যতা দাঁড়াতো না।

//মনু নারী বিরোধী, সেখানে পুরুষদের অধীনে নারী সর্বদা থাকবে, এমনটা বলা//

— যখনি এরকম কিছু বলবে আপনি পাল্টা জবাবে দেখান সেতো মনু এটাও বলেছে পুরুষরা কখনো নারীদের সাথে বাজে আচরণ করবে না, কারণ যেখানে নারীদের অসম্মান হয় সেখানে যাগ যজ্ঞের ও কোনো ফল হয়না। আর যেখানে তাঁরা খুশি থাকে সেখানে দেবতারাও খুশি হয়। আর যেই বাড়ীতে নারীদের চোখের জল পড়ে সেই বাড়ীর পতন খুবই শীঘ্রই হয়। (মনু স্মৃতি 3.56-8)

পিতা, ভাই , স্বামী , দেওয়র, বাড়ির সকল ছেলে দের তাদের বাড়ির মেয়েদের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত আর আভুসন দ্বারা সোভিত রাখা উচিৎ। (মনু স্মৃতি 3.55)

পুরুষ যদি সাফলতা পেতে চায় বিশেষ তিথি ও উপলক্ষে নারীদের প্রসংশা করা, গয়না দেওয়া, নতুন কাপড় দেওয়া তাদের করনীয়। ( মনু স্মৃতি 3.59)

 আজকে যেরম দহেজের নামে অনেক রকম ভাবে exploit হয় সেই দহেজ প্রথার বিরুদ্ধে, মনু স্পষ্ট বলেছেন যারা বিবাহিত স্ত্রীর সম্পত্তির উপর ভর করে বাঁচে বা তারা পাপি ও নরকগামী।
(মনু স্মৃতি 52)

রাস্তায় বুরো, অসুস্থ, নারী, ইত্যাদি তাদের আগে রাস্তা দেওয়া। (মনু স্মৃতি 2.138)

যাই হোক এরকম শ্লোক আপনাকে চাইলে প্রচুর দেখাতে পারবো। এমনকি নারীদের জন্য কোনো অপরাধের দন্ড ব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে কম পুরুষদের তুলনায়। 

আর মজার বিষয় হচ্ছে মনু নারীদের নিয়ে যেই সকল বিবাদিত কথা বলেছে আর সেটা নিয়ে যারা এতো লাফাচ্ছে মনুকে খারাপ কথা বলে, একটু খুজে দেখুন তাদের যারা আইকন তাদের এরকমই ভয়ানক কথা রয়েছে নারীদের নিয়ে। যেমন আম্বেদকর তো মনু স্মৃতি জ্বালিয়ে ছিলো কিন্তু সে নিজেই বলেছিল এক জায়গায় "নারীদের কাজ রাজনীতি তে নয়, ঘরে বাচ্চা সামলানো, তাদের নাক পোছা এইসবে, নারীদের সেই কাজ ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া লজ্জাজনক কাজ....."
(Source: Writings and Speeches of Dr. B. R. Ambedkar, Volume 40, Page 467)

ভাবুন তো একবার কথাটা। এবাদে আসুন আম্বেদকর ও আম্বেদকরবাদীদের আইকন ভগবান গৌতম বুদ্ধের বাণী গুলো তে। সেখানে কিছু কথা নারীদের নিয়ে এমন আছে নিজেরই লিখতে কেমন লাগবে। বেশী বলবো না শুধু একটাই উদাহরণ দিচ্ছি, বুদ্ধের মতে যে নারী স্বামীর মার খেয়েও মুখ বুজে সব কিছু মেনে নেবে আর তার দাশীর মতো হয়ে থাকবে সে সব চেয়ে উওম স্ত্রী। 

আরেকটি মজার বিষয় আম্বেদকর যেই বর্ণ ব্যবস্থার জন্য হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্ৰহন করেছিল, সেখানে ভগবান বুদ্ধের বচন রয়েছে যে বোধিসত্ত্বদের জন্ম কেবল নাকি ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের মতো উচ্চ কূলে হয়, কোনো নিম্ন জাতিতে জন্মায় না। তার কারণ আগের জন্মের পাপ অনুযায়ী নাকি মানুষের নিম্ন জাতিতে জন্ম হয়। এবার আপনারাই নিজেরা বোধ বিচার দিয়ে ভাবুন‌ কথাগুলো।

তো আমার প্রশ্ন এখানে যারা মনুর কিছু বিবাদিত শ্লোক নিয়ে মনুকে গালাগালি করে নারীবিদ্বেষী বলে তাঁরা বুদ্ধ ও আম্বেদকরের এই কথা কিভাবে ব্যখ্যা করবেন ? 

এরকম অনেক মনীষীদের এমন এমন কিছু কথা রয়েছে নারীদের নিয়ে যেগুলো বললে অনেকেই আগে তাদের যেই চোখে দেখতো সেই দৃষ্টি পাল্টে যাবে।

যাই হোক আমি ধরে নিলাম মনু স্মৃতিতে কিছু শ্লোক আজকের দিনের দৃষ্টিতে দেখলে হয়তো অনেকেরই ভালো লাগবে না স্বাভাবিক কারণ ধর্ম গ্ৰন্থ modern society -র লোকেরা কি ভাববে না ভাববে সেই ভেবে লেখা নয়। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টির আদিতে স্বয়ম্ভূ মনু(হিন্দু ধর্ম মতে প্রথম মানুষ) এই মনু স্মৃতির জ্ঞান আর বিধান মানব জাতির জন্য দিয়েছিলেন। যলি ইতিহাসের দৃষ্টিতে দেখা যায় তাহলে Academic মতে মনু স্মৃতির আনুমানিক রচনা কাল ২৫০০-৩০০০ বছর পূর্বে। সেই সময়ের সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে যদি আজকের সমাজ‌ ব্যবস্থা ও নীতিবোধ হুবহু মেলাতে বসেন অবশ্যই বহু জায়গায় মিলবে না। সেটা শুধু মনু স্মৃতি নয় দুনিয়ার সব ধর্ম গ্ৰন্থেই এমন কিছু জিনিষ পাবেন যা আধুনিক সমাজের নীতিবোধ দিয়ে দেখলে মেনে নিতে পারবেন না। আমি আবার Repeat  করলাম "সব ধর্মের"। 

এবার আসি এই প্রশ্নে যে ধরুন তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক কোনো গ্ৰন্থে বা ধর্ম গ্ৰন্থে কিছু কথা ভুল আছে আর কিছু কথা খারাপ আছে তাহলে সেই গ্ৰন্থটিকে কি জ্বালানো উচিত শুধুমাত্র খারাপ অংশ গুলোর জন্য ?

যদি আপনার উওর হ্যাঁ হয় তাহলে বলবো সবার প্রথম তো একটি নির্দিষ্ট ধর্ম গ্রন্থকে জ্বালানো উচিৎ পুরো বিশ্ব জুড়ে তার কারণ সেই নির্দিষ্ট গ্ৰন্থটিতে ভালো কথা যা আছে তা হয়তো খুব কম আর যা খারাপ আছে সেটার পরিনাম ভারত নয় সারা দুনিয়া ভুগছে। আপনারা তো বেশ স্মার্ট আমাকে নাম ও নিতে হলো না আপনারা বুঝে গেলেন আমি কোন ধর্ম গ্রন্থের কথা বলছি, সেই বিখ্যাত সবুজ মলাটের পুস্তক, দান দিক দিয়ে লেখা, বিধর্মীদের গলা নামানো ইত্যাদি মহা বাক্য দিয়ে যেই গ্ৰন্থ পরিপূর্ণ, আর নারীবিদ্বেষে সেই ধর্ম গ্ৰন্থের জুড়ি মেলা ভার। কথা দিচ্ছি যারা মনু স্মৃতিকে খারাপ বলে সেই পুস্তকের পাশে মনু স্মৃতি কিছুই না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে যারা মনু স্মৃতির দহনের পক্ষে তাদের কখনো সেই পুস্তক জ্বালানো তো দূর, উল্টে আপনার বিরুদ্ধে case করে দেবে যদি সেই পুস্তক জ্বালানোর কথা বলেন। আবার নির্লজ্জ্বের মতো হয়তো বোকা বোকা যুক্তি দেবে, যেহেতু এই দেশে হিন্দুরা Majority তাই তারা তাদের মতাদর্শর বিরোধীতা ও সমালোচনা করা বেশী প্রাসঙ্গিক মনে করে। প্রথমত এই যুক্তির সর্ব প্রথম ভুল যেটা সেটা হলো সত্য কখনো majority বা minority দেখে বিচার করা উচিত নয় যেই মূহুর্তে সেটা হয় সেই মুহূর্তে সেটিও মিথ্যাতে পরিনত হয়। আর এমনিও সেই সবুজ মলাটের বইয়ের অনুগামীদের minority বলাও ভুল তারাও 2nd majority এই দেশে। 

হিন্দু সমাজের মধ্যেও যেই ভুল রয়েছে তারা অনেকে মনু স্মৃতি দহন casually নেয় এটা দেখতে পায়না মনু স্মৃতি দহনের আরালে যারা এই কার্য করছে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে হিন্দু ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ। মনু আর মনু স্মৃতির শ্লোক আপনারা অনান্য হিন্দু শাস্ত্রেও প্রচুর জায়গায় পাবেন যেমন মহাভারতে, রামায়ণে, পুরাণে, এমনকি বেদেও মনুর নিয়মের উল্লেখ বহু জায়গায় আছে। আচ্ছা কাল যদি সেই মনু স্মৃতির দোহাই দিয়ে সেই শাস্ত্র গুলোকে যখন জ্বালাতে আসবে তখন কি করবেন ? হয়তো ভাবছেন আমি ভয় দেখাচ্ছি ঠিক ২ বছর আগে উওরপ্রদেশে রামচরিতমানাস জ্বালানো হয়েছিল কিছু হতচ্ছাড়া দ্বারা, কারণ? সেই এক যা মনু স্মৃতি জ্বালানোর কারণ নারীবিদ্বেষ আর শুদ্র বিদ্বেষের বাহানা। তাও যাই হোক সেটা উওর প্রদেশ বলে পরে তারা Arrest হয়েছিল, এখানে হলে কি হতো আমার জানা নেই।

শেষে আমার পরামর্শ এই  দিয়ে শেষ করছি  কখনো কখনো Unapologetic হতে শিখুন
সবার সাথে Defensive হয়ে লাভ নেই, কিছু লোক আপনার ব্যখ্যা শুনতেও চায়না তাদের মতাদর্শ ও এজেন্ডা ফিক্সড। তাই তাদেরকে বুঝিয়ে সময় নষ্ট করতে যাবেন না ওদের ঔষধ দিন পালটা ওদের বিচারধারার বা যেই মহাপুরুষের অনুগামী তাদের ক্যাচলা সামনে বার করুন। বাকি আপনারা নিজেদের মতামত রাখুন 🙏🏼


//নারী আর শুদ্রদের পরাশুনা নিষিদ্ধ করেছে মনু//

ওরে আহামমুক!! আগে লৌকিক বা সামাজিক জ্ঞান আর বৈদিক জ্ঞানের পার্থক্য জান বেদ অধ্যায়ন নারী, শুদ্রদের জন্য বর্জিত করেছে, তার মানে সমস্ত লৌকিক বিদ্যার জ্ঞান তাদের জন্য বন্ধ ছিল না, ৬৪ কলা-র বিদ্যাতে নারী, শুদ্র, বর্নসংকর সবার অধিকার ছিল। সেই ৬৪ বিদ্যায় কি কি আসে নিজে একটু কষ্ট করে পড়ুন, সব কিছু কি আমি লিখে দেবো নাকি?
মহাভারত, পুরাণ খুলেও দেখে নিন বিশ্বাস না হলে শুদ্ররা ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রী ভালো ভালো উচ্চ পদে ছিল। মনে হয় কোনো মূর্খ সেই পদে বসতে পারে? 

রইলো প্রশ্ন বেদ অধ্যায়নের নিষেধ কেন ? তার কারণ বেদ আপনার নারায়ন দেবনাথের হাদা ভোদা কমিক্স না, যে হাতে নিয়ে যে কেউ পড়বে। দক্ষিণ ভারতে পারলে গিয়ে কোনো শ্রৌত ব্রাহ্মণ পরিবার দেখুন তারা কিভাবে বেদ পাঠ করে ও জীবনযাপন করে এর জন্য। কথা দিচ্ছি ওরকম কঠিন নিয়ম দেখলেই বেদ পাঠ করার নেশা কেটে যাবে। সমাজের সকল মানুষ যদি সেইরকম ভাবে জীবনযাপন করতো তাহলে দেশ আর চলতো না। তাই ঈশ্বর বেদ পাঠ সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছিলেন। এবার এখানেও অনেক মারপ্যাঁচ আছে যদি কোথাও বেদ লেখা থাকে সেটা নাকি শুদ্ররা পড়তে পারে তাতে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা নেই, নিষেধাজ্ঞা শুধু বেদের মন্ত্র উচ্চারণে। আর এমনিও কে বলেছে  নারী, শুদ্রদের বেদের জ্ঞান থেকে দুরে রাখা হয়েছে? তাদের জন্য পঞ্চ বেদ (ইতিহাস, পুরাণ) এই শাস্ত্র গুলো রয়েছে যার মাধ্যমে সেই বেদের জ্ঞান সহজ সরল ভাষায় তারা পাচ্ছে। তাও যদি কারোর এখনো এই নিয়ে সমস্যা থাকে তাদের জন্য ভগবান তন্ত্র ও আগমের মার্গ দিয়েছে। সেখানে শুদ্র তন্ত্র শাস্ত্র পড়তে পারে, গুরু ও হতে পারে। আর কি চান বলুন তো ? সব রকম রাস্তাই ঈশ্বর হিন্দু ধর্মে দিয়েছে শুধু আপনাকে কষ্ট করে একটু খুঁজতে হবে, নিশ্চয়ই সমাধান পাবেন।







এবার আসি কিছু হিন্দু মহলের ভিতরের সমস্যায় অনেক হিন্দু বিশ্বাস করে মনু স্মৃতি এমন কোনো প্রধান ধর্ম গ্রন্থ নয় গীতা, বেদ, উপনিষদ, এর মতো, সুতরাং তাঁরাও বিশেষ কোনো আগ্ৰহ দেখায় না যারা মনু স্মৃতি দহন করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে। আরেক শ্রেণী রাজনৈতিক কারণে বিশেষ কোনো জাতিকে Appeasement এর জন্য ভুল হচ্ছে জানা সত্বেও চুপ থাকে। আর আরেক শ্রেণীর হিন্দু মনু স্মৃতিকে Defend করতে মনমত আজগুবি ব্যখ্যা বা শেষে না পারলে শ্লোক প্রক্ষিপ্তের যুক্তি দেয়। 

প্রথম ভুল হচ্ছে কে বলেছে আপনাকে মনু কোনো প্রধান ধর্ম গ্রন্থ নয় ? সমস্ত স্মৃতির মধ্যে মনুর স্থান সবার ওপরে। বাল্মীকি রামায়ণ, কালিদাসের রঘুবংশ কাব্য অনুযায়ী শ্রীরাম ও তার পূর্বপুরুষরা মনুর নিয়ম অনুসারে রাজ্য শাসন করতো। যেমন ভগবান রামের পূর্বপুরুষ রাজা দিলীপ মনুর নিয়ম থেকে অলপ বিস্তার ও 
रेखामात्रमपि क्षुण्णादामनोर्वर्त्मनः परम् ।
न व्यतीयुः प्रजास्तस्य नियन्तुनेमिवृत्तयः॥ Raghuvamsa 1.17
"The subjects of king Dilipa did not swerve even a little from the path that had been trodden from the days of Manu."


ভাবুন তো স্বয়ং ভগবান নিজে রাজ্য শাসন যেই নিয়ম অনুযায়ী করেছে সেটা কি সামান্য আতিপাতি হতে পারে? এবার অনেকে এই যুক্তি দিতে পারে ভগবান রামের সময় যেই মনুর নিয়ম ছিল পরবর্তীতে বর্তমান যেই মনু স্মৃতি আছে সেটা ইতিহাসে অনেক কিছু প্রক্ষিপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সেই প্রসঙ্গে পড়ে আসছি তবে মনে করিয়ে দিতে চাই ভগবান রাম যখন বালি বধ করেন তখন মনু স্মৃতির দুটি শ্লোক উদ্ধৃত করেছিলেন। সেই দুটি শ্লোক কিন্তু বর্তমান মনু স্মৃতিতেও বিরাজমান। 

 মহাভারতে 6.43.2 বলছে "सर्ववेदमयो मनुः" i.e. Manu is the embodiment of the Vedas. "মনু হলো বেদের মূর্ত রূপ।"

যাই হোক এতো গেল রামায়ণ এবার আসি স্বয়ং বেদে, সেখানেও মনুর নিয়ম বলে উল্লেখ আছে, আর বলা আছে আর্যরা মনুর দেখানো নিয়ম পালন করে চলে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি ঋগ্বেদের 8.30.3 নং মন্ত্রে ঋষি প্রার্থনা করছে যেন তারা মনুর দেখানো পথ থেকে কখনো বিচলিত না হয়।


দেখুন বিশ্বাস না হলে যারা মনুর বিরোধী তারা আসলে কোন কোন চিন্তাধারায় বিশ্বাসী, কথা দিচ্ছি সবার মধ্যেই সামঞ্জস্য পাবেন হিন্দু বিদ্বেষ নিয়ে একটি উদাহরণ আমি আম্বেদকরকেই ধরছি যারা ভাবেন তিনি শুধু মনু স্মৃতির বিরোধীতা করেছিলেন হিন্দু ধর্মে নিয়ে কোনো সমস্যা ছিলো না, তাদের মনে করাই আম্বেদকর হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন জনসভায় ও বৌদ্ধ ধর্ম গ্ৰহন করেছিলেন। এমনকি আসল বৌদ্ধ ধর্মের সাথে হিন্দু ধর্মের মিল আছে বলে তিনি সেগুলোকেও Reject করে নিজের মনমত একটি বৌদ্ধ ধর্ম বানিয়েছিলেন যার ২২ টা প্রতিজ্ঞা কি সেটা আপনারা Google এ সার্চ করুন দেখবেন কতো সুন্দর হিন্দু ধর্ম নিয়ে বলেছেন সেটা টের পাবেন, এবাদে তার লেখা বই Riddles in Hinduism এ মা কালী, শিব, রাম, কৃষ্ণ ইত্যাদি কোনো দেবতাকে নিয়েই নোংরা কথা বলতে পিছু পা হননি। এমনকি আমার বলতে অসুবিধা নেই এমন নোংরা কথা যা হয়তো কোনোদিন মুসলিম, খ্রিস্টানরাও বলেনি সেগুলো পর্যন্ত উনি বলেছেন। 



Comments

Popular posts from this blog

Full analysis of child marriage and Pedophilia in Hinduism.

Mahabharat historicity

Do u believe in Rebirth ?