আজকে হনুমান জয়ন্তী সেই সূত্রে আজ হনুমান সম্পর্কে এক অজানা তথ্য দেবো আপনাদের। তার সাথে বিধর্মীদের দ্বারা চালিত এক আরোপের খন্ডন করবো।
বহু পুরাণে এই গল্পটি রয়েছে যে ভগবান বিষ্ণু যখন মোহিনী রূপ ধারণ করেছিলেন সেই সময় মহাদেব কামের বষিভূত হয়ে নিজের বীর্য ফেলে দিয়েছিলেন। এই কাহিনী নিয়ে বিধর্মীদের আরোপ এই যে :- "এই তোমাদের ভগবান ? নিজের কাম বাসনা সংযম করতে পারে না? এ কেমন ভগবান?"
এবার সাধারণ সরল সাধাসিধে হিন্দুরা যারা শাস্ত্র সম্পর্কে অবগত নয় তারা সহজেই বিভ্রান্তির শিকার হয়। আরেক বেশী পাকা সমাজ হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে যারা কিছু না জেনে না বুঝে পুরাণ শাস্ত্রকে প্রামাণ্য গ্রন্থ নয় বলে দেবে।
তবে এই সকল বিভ্রান্তির সমাধানে আজকে এই লেখাটি। প্রথমত যারা বিন্দুমাত্র হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে জানে তারা জানে ভগবান কোনো কিছুতেই বশিভূত হয়না যদি না সে নিজের ইচ্ছায় হতে চায়। আর তার ইচ্ছে ও লীলার পিছনে কোনো না কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। এই ক্ষেত্রে শিব পুরাণে বলা ভগবান সেই বীর্য থেকে হনুমানের জন্ম। ভগবান বিষ্ণু যখন কোনো লীলা করে ভগবান শিব ও সেই লীলায় ভগবানের সাহায্য করার জন্য অংশগ্রহণ করেন। ভগবান বিষ্ণু শ্রীরাম রূপে অবতীর্ণ হলেন এই ধরাধামে তাই তার সেবার জন্য হনুমানের আবির্ভাব। এইজন্য হনুমানকে রুদ্রের অংশ বা শিবের অবতার বলা হয় শাস্ত্রে। শিব পুরাণে স্পষ্ট বলা এই লীলা ভগবান শ্রীরামের সাহায্যের জন্য করেছে। বর্নিত আছে শিবের সেই বীর্য সপ্ত ঋষিরা সংগ্রহ করে আর তারপর সেটি নিয়ে মাতা অঞ্জনীর কানে দিয়ে দেন। তারপর মাতা অঞ্জনীর পুত্র হয়ে হনুমানের জন্ম।
এবার এখানেও কিছুজন প্রশ্ন করবে এটা কিভাবে সম্ভব যে কানে বীর্য দিল আর তার থেকে হনুমানের জন্ম হলো? এটাও কি হওয়া সম্ভব?
প্রথমত আপনি যেই মানুষের বীর্যের মতো ভাবছেন সেই বীর্য এটা নয়। ভগবানের আমাদের মত পঞ্চভূতের দেহ নেই। সুতরাং যাদের শরীর রক্ত, মাংশের না তাদের বীর্য ভৌতিক জগতের কোনো জীবের সাথে মিলিয়ে ফেলাই মূর্খামি। এবার আসি প্রসঙ্গে তন্ত্র সম্পর্কে যারা অবগত তারা জানে metaphorically গুরুর বীর্য হচ্ছে বাস্তবে "বীজ" মন্ত্র যা গুরু শিষ্যের কানে কানে দেয়। যার মাধ্যমে তার ঈশ্বর লাভ হয়। ঠিক সেরকম ভাবেই ভগবান শিবের বীর্য সপ্ত ঋষিরা মাতা অঞ্জনীর কানে দেন যিনি সাধিকা ছিলেন। তার মাধ্যমেই স্বয়ং তার পুত্র রূপে ভগবান আবির্ভূত হন।
আচ্ছা এই কাহিনী শুনে দর্শকদের মনে আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে যে অনেক জায়গায় শোনা যায় যে শিব মোহিনী লীলার ফলে আয়পপা(সষটা)-র জন্ম হয়েছিল। তাহলে কোন কাহিনী টা সত্যি এর উত্তর কল্প ভেদ। আয়পপার ঘটনা অন্য কল্পের আর হনুমানের ঘটনা অন্য কল্পের। এবার প্রশ্ন আসবে কল্প কি? এই প্রসঙ্গে এই লেখায় আর বিস্তারিত বললাম না। ছোটোর মধ্যে বললে ভগবান ব্রহ্মার একদিনকে এক কল্প বলে। আর ভগবান ব্রহ্মার এক কল্প মানে মানুষের সময় অনুযায়ী 4.32 billion বছর। ঠিক সেরকমই আলাদা ভগবান ব্রহ্মার দিনে আলাদা আলাদা ঘটনা ঘটে। ঠিক যেমন কোনো কল্পে শিব গনেশের মাথা কাটে তো অন্য কোনো কল্পে শনি দেবের দৃষ্টিতে তার মস্তক আলাদা হয়।
Comments
Post a Comment